হারিয়ে যাওয়া জল – গ্রামের কুঁয়োর মুখে লেখা আছে আজও পিপাসার ইতিহাস
কুয়ো মানেই জীবন
এই গল্প উঠে এসেছে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গী ব্লকের রওশাননগর, ফরিদপুর, খয়রামারি, সাগরপাড়া — আর নদিয়ার করিমপুর ১ নম্বর ব্লকের সুন্দলপুর, জমসেরপুরের মতো গ্রাম থেকে। তবে শুধু এই গ্রাম নয় — এই গল্প ছড়িয়ে আছে বাংলার প্রতিটা কোণে।
যেখানে আজও পিপাসা মানেই — কুয়োর নাম।
একটা সময় ছিল, যখন পাড়ায় পাড়ায় ছিল এক বা একাধিক কুয়ো। চৈত্র মাস এলেই কুয়োর জলে টান পড়ে — ভোরবেলা থেকেই শুরু হতো লাইন। হাতে বালতি, কলসি — আর হালকা চাপা চিৎকার — “আগে আমি এসেছিলাম!” তবু মিল থাকত... ঝগড়া হতো, কিন্তু জল পেত সবাই। কখনো কুয়োতে পড়ে যেত সাপ, ব্যাঙ, বিড়াল, এমনকি শেয়াল পর্যন্ত! তখন গোটা গ্রাম একজোট হতো — জল ফেলে পরিষ্কার করা হতো, আবার কুয়োকে নতুন করে জীবন দেওয়ার চেষ্টা চলতো। কারণ — কুয়ো মানেই ছিল জীবন।
কুয়োর পেছনের মানুষ
কোনো কোনো জায়গায় কুয়োর পেছনে ছিল একজন মানুষ — যার উদারতায় জল পেত গোটা গ্রাম রওশাননগরের মরহুম হাজি পাচুবিবি — নিজের টাকায় বানিয়েছিলেন গ্রামের জন্য কুয়ো। বলতেন — “জলের অভাবে যেন কেও না থাকে।” আজ তাঁর সেই কুয়ো আর ব্যবহৃত হয় না, আবর্জনায় ভর্তি। কিন্তু মানুষের মুখে আজও ফিরে আসে তাঁর কথা। খয়রামারির এক কুয়োর মালিক — নিজের বাড়ির উঠানে কুয়ো হলেও কখনো কারো হাত আটকাননি, কাউকে বাধাও দেননি জল নেবার জন্য। বলতেন — “জল তো সবার, আমি কে যাতে বারণ করি?” এই কুয়োগুলো শুধু ইট আর সিমেন্টের গর্ত নয় — এগুলো বাংলার মানবিকতার প্রতীক।
হারানো স্মৃতি আর শূন্য কুয়ো
স্মৃতির ভেতরে একটা দৃশ্য রয়ে গেছে — করিমপুরের সুন্দলপুর গ্রামের সুবল সরকারের আমবাগানে খেলত গ্রামের সব বাচ্চারা। গ্রীষ্মের দুপুরে — ঘাম ভেজা গায়ে দৌড় দিত সবাই... তৃষ্ণা পেলে ছুটে যেত ফকির খাঁর কুয়োর দিকে। সেই কুয়ো ছিল তখন ১০ থেকে ৮০ বছরের মানুষেরও গ্রীষ্মের একমাত্র আশ্রয়। এক ঢোক ঠান্ডা জল — আর জীবন যেন আবার শুরু। আজ সেই কুয়ো পড়ে আছে পরিত্যক্ত না আছে বাঁশের মাচা, না আছে জল তুলবার সেই চেনা শব্দ। ঝালাই হয় না বহুদিন — রয়ে গেছে কুয়োটির চারপাশে নীরবতা আর শূন্যতা। আর সুবল সরকারের সেই ছায়ামাখা আমবাগান, যেটা ছিল এক সময় খেলার রঙিন ঠিকানা — সেটাও হারিয়ে গেছে সময়ের গর্ভে। তবু মানুষের মনে এখনো স্পষ্ট সেই দৃশ্য — “সুবল সরকারের বাগানে খেলা, আর তৃষ্ণা পেলে ফকির খাঁর কুয়োর জল।”
জল নয়, যেন সম্পর্কের স্বাদ ছিল সেই কুয়োর জলে।
🟢 ধরণীগাথা (Dharani Gatha) “ধরণীগাথা – যারা আলোয় আসেনি, তাদের গল্পই আমরা বলি।” || “Dharani Gatha – We tell the stories of those who never came to light.” 🎯 আমাদের লক্ষ্য (Mission): 🔹আমাদের উদ্দেশ্য একটাই – গ্রামের মাটি, মানুষের জীবন, কৃষির গন্ধ, নদীর কান্না আর ইতিহাসের স্তব্ধতা – সবকিছু ক্যামেরার চোখে জীবন্ত করে তোলা। 👁️🗨️ আমাদের ভিশন (Our Vision) 🔹 মাটির গল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া 🔹 অজানা মানুষদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠা 🎥 কনটেন্ট টাইপ (Content We Create) 🔹কৃষকের জীবন ও চাষাবাদ 🔹নদনদী, মাঠঘাট ও প্রাকৃতিক জীবনধারা 🔹হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ পেশা ও সংস্কৃতি 🔹অজানা ঐতিহাসিক স্থান 🔹সাধারণ মানুষের অপ্রকাশিত কাহিনি 🗓️ কবে প্রকাশ করি? (Upload Schedule) 📍 নতুন ভিডিও: প্রতি শনিবার ও রবিবার Youtube & Facebook. @Dharanigatha 🕰️ Weekend Stories, Field-Based Real Content
0 Comments