সোনালী পাট – কৃষকের রক্ত-ঘামে লেখা বেদনার ইতিহাস
পাটের জীবনরেখা
মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি ব্লক জুড়ে বিস্তৃত পাটের খেত। এখানকার কৃষকের জীবন যেন এই সোনালী ফসলকে ঘিরেই আবর্তিত। পাট শুধু ফসল নয়—এ যেন সংসারের প্রাণভোমরা। জমির বুক থেকে উঠে আসে সোনালী পাটের তন্তু, আর সেই তন্তুর টানেই টিকে থাকে পরিবারের জীবিকা। চাষির ঘামে ভিজে ওঠে এই তন্তু, ক্লান্ত হাতের ফোস্কায় জন্ম নেয় স্বপ্ন। ভোরের অন্ধকার ছেড়ে মাঠে নামা কৃষকেরা জানে—এই পাটই তাদের সন্তানের পড়াশোনা, এই পাটই ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ, এই পাটই সংসারের ভাত-কাপড়ের ভরসা। একটা সময় এই পাট চুপিসারে ঢুকে পড়ে গ্রামের প্রতিটি ঘরে, আনে অর্থের আলো, আনে সংসারের স্বচ্ছলতা। এ যেন মাটি থেকে জন্ম নেওয়া আশীর্বাদ।
আনন্দের বছর, প্রকৃতির দয়া
গত কয়েক বছর কষ্ট যেন আজও ভোলেনি চাষিরা। আকাশে মেঘ উঠত, কিন্তু বৃষ্টি নামত না। শুকিয়ে যেত খাল, বিল, পুকুর—পাট পচানোর জল পেত না কেউ। তখন বুকের ভেতর জমে থাকত দীর্ঘশ্বাস, কারণ মাঠের পাট যেন চোখের সামনেই ছাই হয়ে যেত। কষ্টের সেসব দিন শেষে এ বছর প্রকৃতি দয়া করেছে। বর্ষার মেঘ ভিজিয়ে দিয়েছে জমি, ভরে উঠেছে খাল-বিল-পুকুর। চাষিরা আবার পেয়েছে জীবনের জল। এবার আর পাট পচাতে হিমশিম খেতে হয়নি কোনো কৃষককে। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক সুখবর—এই বছরের পাটের বাজারদর প্রায় দ্বিগুণ। যেন ভাগ্য হেসেছে হঠাৎ করেই। ফলস্বরূপ চাষির মুখে ফিরেছে হারানো হাসি। যে হাসি অনেক দিন চাপা ছিল অনিশ্চয়তার আঁধারে। শুধু কৃষক নয়, কৃষকের পরিবারও আনন্দে ভরপুর। মেয়েরা রান্নাঘরে, ছেলেরা মাঠে—সবাই একসঙ্গে বলছে, “এবার কষ্টের দিনগুলো কিছুটা হলেও কাটল।”
পাট আবার যেন গ্রামে এনেছে উৎসবের আমেজ।
আক্ষেপের ছায়া
কিন্তু এই খুশির ছবির আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক দীর্ঘশ্বাস। এবছর অতিরিক্ত বর্ষা ফলন কমিয়ে দিয়েছে অনেকটাই। যেখানে প্রতি বিঘায় তিন থেকে চার কুইন্টাল পাট ফলত, সেখানে এ বছর উঠেছে মাত্র দেড় থেকে দু কুইন্টাল। ভাবুন তো—একজন চাষি মাসের পর মাস মাঠে দাঁড়িয়ে, ঘাম ঝরিয়ে, পরিবারের আশা-ভরসা বুকে নিয়ে ফসল তুলল। কিন্তু ঘরে নিয়ে এসে যখন দেখে মাপ অনুযায়ী ফলন উঠল না—সেই বেদনা শুধু তার চোখেই বোঝা যায়। বাজারে দাম দ্বিগুণ হলেও, জমির ফলন কমে যাওয়ায় হাতে আসা লাভ তেমন বাড়েনি। চাষির মুখে হাসি আছে, কিন্তু সেই হাসি চাপা কান্নায় ভেজা। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি শুধু মনে মনে ভাবেন— “এবারও পুরোপুরি স্বস্তি মিলল না।” এই সোনালী ফসল তাই একসঙ্গে শোনায় আনন্দ আর বেদনার গান—ঘামের বিনিময়ে কেনা সুখের স্বপ্ন, আর না-পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস। পাটের হাসি, আর পাটের আক্ষেপ।
দামোশ বিল, বড়বিলা আর পদ্মার কষ্টগাথা
এবার জলঙ্গি জুড়ে দামোশ বিল, বড়বিলা আর পদ্মার আশপাশের যে নিচু জমিতে পাট হত—সেই চাষিরাই ভুগেছে সবচেয়ে বেশি। অতিরিক্ত বৃষ্টির জলে বিল-খাল-নদীর ধারে সব জমি তলিয়ে গেছে। ডুবে যাওয়া জমিতে জলে দাঁড়িয়ে চাষিদের পাট কাটতে হয়েছে, লেবার খরচ পড়েছে দ্বিগুণ, তবুও ঘরে তুলতে পেরেছে সামান্য ফসল। যেন প্রাণ দিয়ে পরিশ্রম করেও হাতে এসেছে শূন্যতা। চাষিরা বলছে—যদি বড়বিলা থেকে সাদিখান দিয়াড় হয়ে পদ্মা নদী পর্যন্ত যে ক্যানেল্টি আছে, সেটি সময়মতো সংস্কার হতো, তাহলে অন্তত জল আটকে থাকত না। তাদের ঘরে কিছুটা হলেও টাকা উঠত। কিন্তু এখন সেই জমাট জলেই ডুবে আছে মাঠ। ফলে শুধু এই বছরের পাট নয়, পাট কাটার পরে যে ফসলটি আবাদ হতো—সেটাও আর সম্ভব হচ্ছে না। এক ফসল নষ্ট, আরেক ফসলের স্বপ্নও জলে ভেসে যাচ্ছে।
এ যেন কৃষকের চোখের জলে লেখা জমির ইতিহাস।
🟢 ধরণীগাথা (Dharani Gatha) “ধরণীগাথা – যারা আলোয় আসেনি, তাদের গল্পই আমরা বলি।” || “Dharani Gatha – We tell the stories of those who never came to light.” 🎯 আমাদের লক্ষ্য (Mission): 🔹আমাদের উদ্দেশ্য একটাই – গ্রামের মাটি, মানুষের জীবন, কৃষির গন্ধ, নদীর কান্না আর ইতিহাসের স্তব্ধতা – সবকিছু ক্যামেরার চোখে জীবন্ত করে তোলা। 👁️🗨️ আমাদের ভিশন (Our Vision) 🔹 মাটির গল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া 🔹 অজানা মানুষদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠা 🎥 কনটেন্ট টাইপ (Content We Create) 🔹কৃষকের জীবন ও চাষাবাদ 🔹নদনদী, মাঠঘাট ও প্রাকৃতিক জীবনধারা 🔹হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ পেশা ও সংস্কৃতি 🔹অজানা ঐতিহাসিক স্থান 🔹সাধারণ মানুষের অপ্রকাশিত কাহিনি 🗓️ কবে প্রকাশ করি? (Upload Schedule) 📍 নতুন ভিডিও: প্রতি শনিবার ও রবিবার Youtube & Facebook. @Dharanigatha 🕰️ Weekend Stories, Field-Based Real Content

0 Comments